Princess Diana Biography in Bengali Language : প্রিন্সেস ডায়ানার জীবনী অষ্টম এয়ার্লের তৃতীয় কন্যা ছিলেন লেডি ডায়না। ডায়না তখন ‘লেডি ড...
Princess Diana Biography in Bengali Language : প্রিন্সেস ডায়ানার জীবনী অষ্টম এয়ার্লের তৃতীয় কন্যা ছিলেন লেডি ডায়না। ডায়না তখন ‘লেডি ডায়না’ নামে পরিচিত হন। ১৯৫৪ সালে তিনি সম্মানীয় ফ্রান্সিস রুথ বুর্ক রােচেকে বিবাহ করেন, তিনি ছিলেন চতুর্থ বেরন ফেরময়-এর কন্যা। ডায়না ছিলেন এই দম্পত্তির তৃতীয় কন্যা।
প্রিন্সেস ডায়ানার জীবনী Princess Diana Biography in Bengali Language
১৯৮১ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী সাদা ও সেনায় মােড়া ব্যার্সিংহাম প্রাসাদের বল রুমে ধীরে ধীরে জাতীয় সঙ্গীতের সুর ধ্বনিত হচ্ছিল, লর্ড চ্যাম্বােরলেইন ঘরের কেন্দ্রীয় স্থানে এসে বললেন, মহারাণী তাকে একটা বিশেষ কথা ঘােষণা করার নির্দেশ দিয়েছেন। লর্ড ম্যাকলেন রাজকীয় ভঙ্গীতে ঘােষণা করলেন যে এটা খুবই আনন্দের বিষয় যে মহারাণী এবং এডেনবার্গের ডিউক তাদের প্রিয় পুত্র সম্পদের যুবরাজের জন্য এয়ার্ল স্পেনসার এবং সম্মানীয় শ্ৰীমতী শ্যান্দ কিউ-এর কন্যা লেডি ডায়না স্পেনসারকে বাগদাতা রূপে নির্বাচন করেছেন। এই ঘটনাটিকে ব্রিটিশ রাজবংশের ইতিহাসে একটি বিশেষ ঘটনা রূপে চিহ্নিত করা যায়, কারণ লেডি ডায়না যে শুধুমাত্র ব্রিটেনের রাজ পরিবারের বধূ হিসাবেই নির্বাচিত হয়েছিলেন তাই নয়, এই সুবাদে তিনিই ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ মহারাণীর পদ অলঙ্কৃত করতেন।
১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই পার্থিব ধুমধামের মধ্যে দিয়ে সৌন্দর্য্যের মহিমায় উজ্জ্বল লেডি ডায়না প্রিন্স চার্লসের সাথে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের ঘােরানাে বারান্দায় দিয়ে হেঁটে আসছিলেন, সেখানকার রাজসিং হাসন গুলি তখন ব্রিটিশ রাজন্যবর্গীয় মানুষদের দ্বারা উজ্জ্বল হয়ে ছিল। লেডি ডায়না সম্পদের রানী হয়ে "Her Royal Highness"-এ পরিণত হতে চলেছিলেন। এই বিয়েটা ছিল রূপকথার গল্পের মতন এবং তা প্রেমের মধুরতায় পূর্ণ ছিল। সেদিন সারা বিশ্ব তারকাময় চোখ বিশিষ্ট উনিশ বছর বয়সী রাণীকে প্রত্যক্ষ করে উল্লাসে নেচে উঠেছিল, লন্ডনের ভিড়ময় রাস্তা দিয়ে সেদিন রাজকীয় ভঙ্গীতে তিনি বেরিয়ে গেছিলেন। তাকে সফলতার প্রতিমূর্তি হিসাবে বিবেচনা করা যায়।
অষ্টম এয়ার্লের তৃতীয় কন্যা ছিলেন লেডি ডায়না। তিনি ছিলেন বাইসকাউনট অ্যালাপ, ১৯৫০-১৯৫২-এর মধ্যে তিনি ষষ্টম কিং জর্জের অশ্বপাল ছিলেন এবং এরপর মহারানী সিংহাসনে আরােহন করার পর তিনি দু বছর তারও অশ্বপাল ছিলেন। ১৯৫৪ সালে তিনি সম্মানীয় ফ্রান্সিস রুথ বুর্ক রােচেকে বিবাহ করেন, তিনি ছিলেন চতুর্থ বেরন ফেরময়-এর কন্যা। ডায়না ছিলেন এই দম্পত্তির তৃতীয় কন্যা। তিনি পার্ক হাউসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সাত বছর বয়স পর্যন্ত ডায়না একটা সুখী শৈশবকাল উপভােগ করতে পেরেছিলেন। তারপর তাঁর বাবা মার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তাকে বাের্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালে তার ঠাকুরদার মৃত্যুর পর তাঁর পিতা সেই সম্মানের অধিকারী হন এবং অষ্টম এয়ার্ল স্পেনসারের পদ অলঙ্কৃত করেন। তিনি অ্যাথগ্রুপে চলে যান। ডায়না তখন ‘লেডি ডায়না’ নামে পরিচিত হন। দু বছর বাদে তাঁর পিতা আবার বিবাহ করেন, এদিকে ডায়নাও তার স্কুল জীবন শেষ করে সুইজারল্যান্ড থেকে ফিরে আসেন। ঘরে বসে বসে তার জীবন একঘেয়ে হয়ে গেছিল এবং এইভাবে একটা বছর কেটে যায়। ১৯৭৭ সালে একটা শুটিং পার্টিতে ডায়নার সাথে প্রিন্স চার্লসের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল। এই সাধারণ সাক্ষাৎ-এর পেছনে অদৃষ্ট যে অন্য কথা বলছে তা তাদের জানা ছিল না। তারপর থেকে প্রিন্স চার্লস তার সাথে কথা বলতে যথেষ্ট আগ্রহী হয়ে ওঠেন, তিনি এই অষ্টাদশী মেয়েটিকে দেখে অভিভূত হয়ে পড়েন। তার গণ্ডীর মধ্যে থাকা বিশ্বব্যাপী মেয়েদের সঙ্গে তিনি তার পার্থক্য দেখতে থাকেন।
প্রথম দিকে তাদের বৈবাহিক জীবন ছিল খুবই সুখের। তিন বছরের মধ্যে ডায়না প্রিন্স উইলিয়াম এবং প্রিন্স অ্যানড্রিউ নামক দুই পুত্রের মা হয়ে গেছিলেন। চারজনের এই ছােট্ট পরিবার খুবই সুখী পরিবার ছিল। রাণী ডায়না ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ মহারাণী এই বিষয়টি তাকে আবিষ্ট করে রেখেছিল। মিডিয়ার চোখেও তিনি তার মহিমা বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। রূপের মহিমায় ভাস্বর এই মহিলা সারা বিশ্বের মিডিয়ার চোখে আদর্শ গল্প রূপে প্রতীয়মান হতে থাকে। তিনি সর্বদাই খবরের শিরােনামে নিজের জায়গা করে নিতেন, কখনও 'Shy Di' রূপে কখনও 'Disco Di' রূপে, কখনও 'Caring Di' রূপে তাে কখনও 'Crusading Di' রূপে। তার রূপ, সৌন্দর্য এবং আকর্ষণ তাকে প্রিন্স চার্লসের থেকে অনেক বেশী গৌরবান্বিত করে তুলেছিল। কুষ্টো এবং এডসের মতন দ্বিমতের বিষয়গুলিতে যখন তিনি নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন এবং তাদের সাহায্যে ছুটে যেতেন তখন তিনি আরও বেশী সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁকে বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত মডেল রূপে চিহ্নিত করা যায়। তিনি প্রতিমায় পরিণত হয়েছিলেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার জীবন বেশী দিন সুখে কাটেনি। তাঁর দাম্পত্য জীবনে চিড় ধরে যায়। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে হাউস অফ কমন্সের প্রধানমন্ত্রী এই রাজ দম্পতির বিচ্ছেদের ঘােষণা করেন এবং ১৯৯৬তে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ডায়নার উপাধী 'Her Royal Highness' তার থেকে নিয়ে নেওয়া হয় এবং তিনি শুধুমাত্র ডায়নাতে পরিণত হন। রাজ পরিবার থেকে বিদায় হওয়া সত্ত্বেও ডায়নার খ্যাতি অক্ষুন্ন ছিল। বিবিসি। তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন যে তিনি ইংল্যাণ্ডের মহারাণী হতে চান না তিনি মানুষের হৃদয়ে মহারাণী হয়ে থাকতে চান। এবং তিনি সত্যিই তা হতে পেরেছিলেন।
আশা এবং ভালােবাসা নিয়ে তিনি তার বৈবাহিক জীবন শুরু করেছিলেন তার ব্যর্থতা তাকে কতটা আঘাত করেছিল তা বর্ণনা করা যায় না। রাজতন্ত্রের আচার আচরণের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে ডায়নার শ্বাসরােধ হয়ে গেছিল, এছাড়া মিডিয়া সর্বদাই তার পিছনে পড়েই ছিল, এই দুটিকেই এই বিবাহ বিচ্ছেদের প্রধান কারণ বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। প্রিন্স চার্লস ছিলেন উচ্চ স্তরের মানুষ তিনি কখনই তার জীবন সঙ্গিনী এই ছােট মেয়েটির কথা বুঝতেই চান নি। তারা দুজনেই ছিলেন ভিন্ন পথের পথিক, কিন্তু তারা একই বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন যা তাদের দুজনের কাছেই দুঃসহ হয়ে উঠেছিল।
এই বিবাহ বিচ্ছেদ ডায়নার উজ্জ্বলতাকে এতটুকু ক্ষুন্ন করতে পারেনি। তাঁর জনপ্রিয়তার কোন অন্ত নেই, তাকে গুপ্ত প্রণয়ের দায়ে দায়ী করা হয়েছিল। কিন্তু যখন প্রিন্স চার্লস তার বহু বছরের সঙ্গী ক্যামিলা পার্কার বােওলেসের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তখন এই সমস্ত বিষয় চাপা পড়ে যায়। জনগণের মত রাণী ডায়নার পক্ষেই ছিল। জনগণের কাছে তিনি সাহসী মা রূপে পরিচিত ছিলেন, এবং তারা ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের মধ্যে থেকেও : সেটি অবজ্ঞা করতে পেরেছিলেন। তাদের সহানুভূতি সর্বদা ডায়নার সাথেই ছিল।।
ডায়না রাজপরিবারের বধূ হিসাবে বেশী দিন থাকলেও তিনি তার দেশের জন্য মায়ের মতনই কাজ করে গেছেন। তিনি জন সাধারণ কে নিয়েই এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন যার জন্য তিনি অনেক বেশী সম্মানের অধিকারী হতে পেরেছিলেন। কোন ক্ষেত্রে তাঁর সহযােগিতার প্রয়ােজন তিনি সে সম্পর্কে যথেষ্ট সজাগ ছিলেন। তিনি এডস ট্রাস্ট, কুষ্ঠ রােগীদের জন্য, ক্যান্সার হাসপাতালে এবং ব্রিটিশ রেড ক্রশ সােসাইটিতে তার সহযােগিতার হাত প্রসারিত করে রেখেছিলেন। তাকে নূতন রাজতন্ত্রের উৎস বলে চিহ্নিত করা যায়।
১৯৯৭ সালের ৩০শে আগস্ট প্যারিসের রাস্তায় গাড়ী দুর্ঘটনায় ডায়নার মৃত্যু হয়, এই খবর বিশ্ববাসীর কানে গেলে সারা বিশ্ব জুড়ে এক শােকের ছায়া নেমে এসেছিল। এই ঘটনা বিশ্ববাসীর চোখে বিশ্বের ক্ষতি বলে চিহ্নিত হয়েছিল। বিশ্বের কোটি কোটি আবাল বৃদ্ধ বণিতা সেদিন শােকাহত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সেই দিন ডায়না তার ব্যক্তিগত আনন্দের সন্ধান। পেয়েছিলেন। এই দিন সন্ধ্যাবেলা তাঁর সঙ্গী এবং বন্ধু ডডাডি আলফায়েদ (হ্যাবােডের মালিকের জ্যেষ্ঠপুত্র) তাকে একটা বড় হিরে বসানোে আংটি উপহার দিয়েছিলেন এবং তার জীবন সঙ্গীনী হওয়ার জন্য তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ডায়না এই আংটিটি ডান হাতের মধ্যমায় ধারণ করেছিলেন। যেদিন প্যারিসের রাস্তায় ডায়না এবং ডােডিকে গাড়ীর ধাক্কায় খুন করা হয়েছিল সেদিন তারা তাদের নূতন জীবন শুরু করতে যাচ্ছিলেন। | ডায়নার এই দুঃখজনক মৃত্যুকে একটা যুগের সমাপ্তি বলে সূচিত করা যায়, এই যুগটি অঙ্কুরিত অবস্থাতেই শেষ হয়ে যায়। এই ঘটনা মৃত্যুর চরমতাকে নব বলে বলীয়ান করলেও জীবনের সাথে ছলনা করেছে। বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মানুষ কিংস্টোন প্রাসাদের লােহার দরজায় ছুটে এসেছিল, প্রিন্সেসের উদ্দেশ্য ফুল এবং বার্তা পাঠিয়ে তাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছিল। এমনকি ৪৫টি শােক প্রকাশের বইও যথেষ্ট নয় এই শােকবার্তা প্রকাশের জন্য।
মৃত্যুর পর ডায়না তাদের দলেই স্থান পেয়েছেন যাদের জীবন খুব ছােট হলেও অর্থপূর্ণ ছিল। ডায়নার খুব প্রিয় বন্ধু এবং বিখ্যাত গায়ক এলটন জনস তার গানের প্রথম লাইনে বলেছিলেন - "A candle in the mind" ডায়নার প্রভাব সারা বিশ্বে প্রবাহিত হয়েছিল। তাঁর বন্ধু বিদায় সম্ভাষণ জানাতে গিয়ে বলেছিলেন "Goodbye England's Rose." ডায়নার মৃত্যুর সাথে একটা সমসাময়িক প্রতিমূর্তি ম্লান হয়ে গেলেও একজন প্রিন্সেসের জীবন গাথা সারাজীবন উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
COMMENTS